কিন্ডারগার্টেনে বিসিএস এর প্রশ্ন, প্রজন্ম কতদূর যাবে?
ডেস্ক নিউজ:
আমার মেয়েটা নার্সারি শেষ করে কেজিতে। ওর বয়সে আমরা সবে স্কুলে যাই। গ্রামীণ জীবনে আমাদের সেই স্কুলে যাবার প্রথম পর্বের নাম ছিল ছোট ওয়ান, বড় ওয়ান। ছোট ওয়ান ডিঙ্গিয়ে বড় ওয়ানে যখন যেতাম তখন আমাদের বয়স ছিল ছয় থেকে সাড়ে ছয় অথবা কারো কারো সাতের মতন। আমাদের বিষয় ছিল মাত্র তিনটি।
বাংলা, ইংরেজি ও অংক। সেও তো শুধুই অক্ষর চেনানো। আর কিছুই না। ক্লাস থ্রিতে গিয়ে
আমরা পেয়েছিলাম ছয় বিষয়। বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণ বিজ্ঞান, সমাজ ও ধর্ম। সেইসব স্তরে স্তরে পড়ালেখার সময় আমাদের জীবনটা ছিল ঝরঝরে ও দারুণ রঙিন। আমার মেয়েকে আমি সেভাবে সময় দিতে পারি না। তার মা সব দেখভাল করে। ফলে জানিই না মেয়েটা কী পড়ছে। পড়তে গিয়ে তাকে কোন পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। পড়তে পড়তে সে কতখানি অসুস্থ হচ্ছে। এসবের কিছুই জানি না।জানলাম গতকাল। আগেভাগে ঘরে ফেরার পর দৃশ্যটা চোখে পড়লো। মেয়ের মা চিৎকার চেঁচামেচি করছে। কেন এত সহজ প্রশ্ন ভুল করে এসেছে মডেল টেস্টে। সামনে তার টিউটোরিয়াল। বাব্বাহ। এই ওয়ানে না ওঠা পিচ্চি মেয়েটার মডেল টেস্ট? টিউটোরিয়াল? আরেকটু এগিয়ে দেখতে হয় তো। গেলাম কাছে। কী ভুল করেছে? প্রশ্ন – বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কোনটি? উত্তর – সুপ্রীম কোর্ট। এটা প্রশ্ন? এই বয়সী তুলতুলে মগজের বাচ্চাদের? এরজন্য এত চাপ? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন বাচ্চাদের সামলাতে হচ্ছে। কোনও ভুল করা যাবে না। যেকরেই হোক নিখুঁত হতে হবে সব। মায়ের মুখ যেন উজ্জ্বল থাকে। ক্লাসের পারফর্মেন্সে যেন টিচারসহ বাবা মা সকলে গর্ব করতে পারে। কিন্তু এই নরম কোমল শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থায় এই সিলেবাস কারা প্রণয়ন করেছে? মুখ ভরে গালি আসে। হাত পা কেমন জানি করে।
এসব যারা এত ছোট বাচ্চাদের জন্য নির্ধারণ করেছে এবং যারা পড়াচ্ছে, সকাল বিকাল এইসব ব্যবসায়ীদের কষে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে। হাত পা বেঁধে পেটাতে ইচ্ছে করে। স্কুলের নামে দোকান খুলে রাখা এইসব অত্যাচারীদের কঠিন শাস্তি চাই। কিন্তু এই শাস্তি চাইবেন কোথায়? অলিতে গলিতে যত্রতত্র স্কুলগুলোর সবকটাতেই এই একই সিলেবাস। ক্লাস ওয়ানের আগেই তাদের সামলাতে হয় আট দশটি বিষয়। কে বুঝাবে এদের? অতিরিক্ত বইয়ের কারণে শিশুদের ওপর শুধু মানসিক চাপ পড়ছে না, তাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। শিক্ষার নামে এই অত্যাচার শিশুদের মানবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের শৈশব চুরি করা হচ্ছে। শিক্ষার প্রতি ভীতি তৈরি হচ্ছে। এই মানসিক অত্যাচারের শিকার শিশুরা যখন বড় হবে তখন জাতিগতভাবে আমাদের মানবিক সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে কোনও সন্দেহ নাই। দেখা যায় জাপানে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত কোন পরীক্ষাই নেই। পৃথিবীর সেরা শিক্ষা প্রণালীর খেতাব পেয়েছে ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা। সেখানে শিক্ষার ব্যাপারে সরকারের অহেতুক নজরদারী নেই। ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষা নেই।
মা-বাবা বাচ্চাকে শিক্ষকদের কাছে দিয়ে নিশ্চত থাকেন। সেখানে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১% এর কম। আসলে একটি শিশুর কাছে অতিরিক্ত প্রত্যাশা না করে তাকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী করতে দিন। স্কুল গুলোতে একজন করে কাউন্সিলর থাকলে ভাল হয়। শিশুরা চাইলে সপ্তাহে যেন একবার তাদের সাথে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা শেয়ার করতে পারে। এতে করে তারা অনেকটা চাপ মুক্ত হতে পারবে। শিশুরা যদি চাপমুক্ত হয়ে নিজের সেরাটা অর্জন করতে পারে তবেই সে একদিন মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসাবে গড়ে উঠবে। শিশুকে তার সফলতা ও ব্যার্থতাসহ নিঃস্বার্থ ভালোবাসুন। সফলতার অনেক পথ আছে।
No comments