গভীর রাতে হাতিয়া থানায় দরবার : ধর্ষকের হাতেই তুলে দেয়া হল কিশোরীকে
ধর্ষক যুবকের কাছেই বিয়ে দেয়া হল ধর্ষিতা কিশোরীকে! ধর্ষণের মামলা না
নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে হাতিয়া থানায় বসে চলে বিয়ের দেনদরবার। এ সময় মেয়ের
বয়স নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও বিয়েতে তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
শেষ পর্যন্ত
ধর্ষিতাকে স্থাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তুলে এনে ওসির মধ্যস্থতায় সমঝোতার পর গভীর
রাতে দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে কিশোরীকে তুলে দেয়া হয় পাশের বাড়ির লম্পট ও
কিশোরীর ইজ্জত লুণ্ঠনের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই রুবেলের হাতেই।
গত সোমবার তমরদ্দি ইউনিয়নের আঠার বেগী উত্তর বেজুলিয়া গ্রামের
প্রভাবশালী কোরবান আলীর ছেলে রুবেল কিশোরীকে (১৭) একা পেয়ে ঘরে ঢুকে ধর্ষণ
করে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে এবং ধর্ষককে
ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এদিকে লোকলজ্জা ও ক্ষোভ-অভিমানে ওই কিশোরী
আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরে কিশোরীকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি
করা হয়।
বৃহস্পতিবার থানার দেনদরবার নিয়ে জানতে চাইলে তমরদ্দি ইউপি চেয়ারম্যান
ফররুক আহাম্মদ মুঠোফোনে সমঝোতা বৈঠকে থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১২টায় আমি থানা থেকে চলে আসি। তবে বিয়ে হয়েছে
কিনা এ ব্যাপারে আমি জানি না। ইউএনও নুর-এ-আলমকে একাধিকবার মোবাইল করা হেলও
তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
হাতিয়া থানার ওসি কামরুজ্জামান শিকদারকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনিও
ফোন ধরেননি। তবে ফোনে কথা হয় হাতিয়া থানার ওসি তদন্ত মিজানুর রহমানের
সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, থানায় ওসির সমঝোতায় রুবেলের সঙ্গে
ওই মেয়ের বিয়ের খবর সত্য। তবে ধর্ষিতা বা তার পিতা এ ব্যাপারে থানায় মামলা
না করলে পুলিশের কিছু করার নেই।
এলাকাবাসী জানায়, এই পুরো ঘটনার পেছনে একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকের হাত
রয়েছে। তার ইসারাতেই থানার ওসি কামরুজ্জামান শিকদার ঘটনার দিন ধর্ষককে
নিজের জিম্মায় নিয়ে ইউএন নুর-এ-আলমের কাছে নিয়ে যান। সেখানে ভ্রাম্যমাণ
আদালত বসিয়ে ইভটিজিংয়ের অপরাধে রুবেলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে রুবেল ১০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পান।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইউএনও বলেছেন, ধর্ষণের বিষয়ে আমাকে কিছু বলা হয়নি।
রুবেল মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করেছে- এমন অভিযোগ বিবেচনায় এনে ওই জরিমানা করা
হয়। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে টনক নড়ে ওসির। পরের দিন ওসি রুবেলকে ফের
মনপুরা লঞ্চঘাট থেকে আটক করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় রেখে বিয়ের
ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে তমরদ্দি
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফররুক আহাম্মদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য, ধর্ষক ও তার
অভিভাবকরা, ধর্ষিতা ও তার বাবা-মা এবং থানার ওসি ও ওসির (তদন্ত) উপস্থিতিতে
বিয়ের আয়োজন করা হয়।
(পূর্বে যুগান্তরে প্রকাশিত)
No comments